সারা বিশ্বে এখন স্লিম ফিগারের জয়জয়কার। মেদবিহীন ছিপছিপে আকর্ষণীয় দেহের গড়ন সবার প্রিয়। এই প্রত্যাশা পূরণ খুব একটা কঠিন কাজ নয়। পরিমিত সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে স্বাভাবিক ওজন আর সুস্থ শরীরের অধিকারী হওয়া সহজেই সম্ভব। এর জন্য খুব বেশি প্রচেষ্টা কিংবা নিয়মিত জিমে যাওয়ারও প্রয়োজন নেই।
মোটা হওয়ার কারণ
সাধারণত বংশগত কারণেই মোটা হওয়ার প্রবণতা থাকে।
মোটা হওয়ার কারণ
সাধারণত বংশগত কারণেই মোটা হওয়ার প্রবণতা থাকে।
অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ মোটা হওয়া বা ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ।
পরিশ্রমহীন অলস জীবনযাপনও মোটা হওয়ার কারণ।
আধুনিক জীবনযাত্রায় ফাস্টফুড খাওয়া মোটা হওয়ার জন্য দায়ী।
অ্যালকোহল এনার্জি/হেলদি ড্রিঙ্কস, সফট ড্রিঙ্কস ইত্যাদি ফ্যাশনিবল কোমল পানীয় মোটা হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে সহজ ও প্রাকৃতিক উপায় হচ্ছে সুষম খাদ্য তালিকা, যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেড এবং ফাইবার আছে, মাঝারি পরিমাণে প্রোটিন আছে এবং কম পরিমাণে ফ্যাট আছে। এজন্য যা করতে হবে—
িআপনার কাজের ধরন অনুযায়ী এবং আপনার পছন্দ-অপছন্দের খাবার বর্তমান খাদ্যাভ্যাস এবং আপনার কাজের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা তৈরি করুন।
িখাদ্য তালিকায় যাতে আঁশযুক্ত খাবার, ভিটামিন, মিনারেল এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট যথেষ্ট পরিমাণে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
িঅতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া কমাতে সব ধরনের চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
িশরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে ফল ও শাক-সবজি খাবেন।
িঅসময়ে খিদে পেলে স্বাস্থ্যসম্মত স্ন্যাক্স খাবেন।
িদুপুর এবং রাতের খাবারের মাঝে অথবা খুব খিদে পেলে শুকনো রুটি, টোস্ট বিস্কুট, মৌসুমি ফল, ফলের রস, সবজির রস, কিংবা সিদ্ধ শাক-সবজি বা সালাদ খেতে পারেন।
িহেলদি ড্রিঙ্কস, এনার্জি ড্রিঙ্কস, সফট ড্রিঙ্কস ইত্যাদি কোমল পানীয় একেবারেই খাবেন না। মনে রাখবেন, যে কোনো ধরনের কোমল পানীয় মোটা হওয়ার আশঙ্কা ৬০ ভাগ বাড়িয়ে দেয়।
িবার বার অল্প করে খাবেন। তবে লাঞ্চ বা ডিনারের সময় অবশ্যই কম খাবেন।
িরাতে অবশ্যই পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।
িকখনোই স্টাভেশন ডায়েট বা উপোস করবেন না। এ পদ্ধতিতে দ্রুত ওজন কমানো গেলেও শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে নানাবিধ রোগব্যাধি দেখা দেয়।
বাড়িতে ব্যায়ামের কিছু পদ্ধতি
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে বাড়িতে নিচের ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়ামগুলো করুন। এতে সময় একেবারেই কম লাগে। অথচ আপনি কর্মক্ষম বা ফিট থাকতে পারবেন এবং শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমা হবে না।
স্পট জগিং : শরীর সুস্থ রাখার জন্য জগিং খুব ভালো ব্যায়াম। বাড়ির বারান্দা বা যে কোনো জায়গায় ২ থেকে ৫ মিনিট স্পট জগিং করবেন।
স্টেচিং : বিভিন্ন ধরনের স্টেচিং ব্যায়াম। যেমন আর্ম স্টেচিং বা লেগ লিফটিং করতে পারেন। এটি ২ থেকে ৫ মিনিট করবেন। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং বিভিন্ন অংশের ফ্যাট ঝরে।
আর্ম ফ্রন্ট রাইজ এবং সাইড রাইজ : সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত সোজা করে একসঙ্গে সামনের দিকে মাথার ওপরে তুলবেন এবং নামিয়ে আনবেন ১৫ থেকে ২৫ বার। একইভাবে দু’হাত সোজাভাবে শরীরের দু’পাশ থেকে মাথার ওপর তুলবেন এবং নামাবেন ১৫ থেকে ২৫ বার।
ফ্রন্ট ব্যান্ডিং এবং সাইড ব্যান্ডিং : সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাতের তালু মাথার পেছনে রাখুন, এরপর পিঠ সোজা রেখে সামনের দিকে যতটা সম্ভব ঝুঁকবেন এবং আবার দ্রুত সোজা হবেন, এভাবে ১০ থেকে ১৫ বার ফ্রন্ট ব্যান্ডিং করুন। এরপর দু’পা পরস্পর থেকে ২ থেকে ৩ ফিট দূরত্বে রেখে মাথার পেছনে দু’হাতের তালু রেখে প্রথমে ডানদিক যতটা সম্ভব ঝুঁকুন এরপর দ্রুত সোজা হয়ে আগের অবস্থানে আসুন। একইভাবে বাম পাশে ঝুঁকুন এবং দ্রুত সোজা হোন। এভাবে ১৫ থেকে ২০ বার এই সাইকেলটি রিপিট করুন।
পুশ-আপস : পুশ-আপস বা বুকডন করলে চেস্ট এবং আর্মস মাসলের শক্তি বাড়ে। পুশ-আপসের সময় লক্ষ্য রাখবেন যেন হাঁটুতে ভাঁজ না পড়ে এবং হাঁটু, কোমর বা পিঠ একই সমতলে থাকে। প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ বার এই পুশ আপস বা বুকডন করবেন।
সিটস-আপস : ভুঁড়ি কমাতে এবং পেটের মাসলের স্ট্রেংথ বাড়াতে সিটস-আপস অত্যন্ত কার্যকর। মাটিতে সোজা হয়ে শুয়ে দু’হাত বিপরীতে কাধের ওপর (ডান হাত বাম কাঁধের ওপর এবং বাম হাত ডান কাঁধের ওপর) রাখুন। এরপর কোমরের ওপর ভর দিয়ে শরীরের উপরের অংশ আস্তে আস্তে মাটি থেকে যতটা সম্ভব তোলার চেষ্টা করুন (সম্ভব হলে বসুন) এবং মাঝামাঝি অবস্থানে ৫ সেকেন্ড থাকুন। আবার আস্তে আস্তে শোয়া অবস্থায় ফিরে যান। এভাবে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০টি সিটস-আপস করবেন।
স্কিপিং : স্কিপিং বা দড়িলাফ, দড়ি ছাড়াও করা যেতে পারে। দু’হাত দু’দিকে সোজাভাবে প্রসারিত করে কাঁধ বরাবর রাখুন। এবার পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে ১ মিনিট লাফান। এরপর ১ মিনিট করে বিরতি দিয়ে ৩ থেকে ৫ বার সাইকেলটি রিপিট করুন।
মনে রাখবেন সুস্থ থাকার চাবিকাঠি আপনার হাতেই। তাই ধূমপান, মদ্যপানসহ সব ধরনের বদঅভ্যাস ত্যাগ করুন। মিষ্টি, চর্বি জাতীয় সব খাবার এবং ভাজাভুজা খাবার এড়িয়ে চলুন। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হোন। প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় যাই ঘটুক না কেন সময় ও সুযোগ করে নিয়ে বাড়িতে থেকেই নিজে নিজে কিছুক্ষণ ব্যায়াম করে নিন। স্বাস্থ্যসম্মত পরিমিত খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম— এ দুটি হচ্ছে জিমে না গিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার মূলমন্ত্র।
লেখক : মেডিকেল অফিসার
কিডনি রোগ (নেফ্রোলজি) বিভাগ
বিএসএমএমইউ, শাহবাগ, ঢাকা