আমাদের সবার মনের কোণায়ই কখনও না কখনও একটা প্রশ্ন উকিঝুঁকি মেরেছে যেটা হলো, আমরা যদি কখনও মহাবিশ্বের শেষ প্রান্তে পৌছাতে পারি তাহলে কি হবে? খাদের কিনারায় দাড়িয়ে যেভাবে আমরা মাথা ঝুকিয়ে নিচে কি আছে দেখার চেষ্টা করি সেভাবে যদি মাথা ঝুকিয়ে দাড়াই তাহলে আমাদের মাথাটা কোথায় থাকবে? তখন তো মাথাটা আর মহাবিশ্বের সীমানার মধ্যে নেই? আমরা কি খুঁজে পাবো মহাবিশ্ব ছাড়িয়ে?
উত্তরটা কিন্তু খুবই হতাশাজনক কারণ আমরা কখনই মহাবিশ্বের শেষ প্রান্তে পৌছাতে পারব না। এর কারনটা কিন্তু এই না যে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে, যদিও কথাটা সত্যি, কিন্তু আসল কারনটা হলো আমরা যদি মহাবিশ্বের বাইরের দিকে একটা সরলরেখা ধরে ক্রমাগত, বিরামহীণ ভাবে অনন্তকাল ধরে যেতেই থাকি তারপরও আমাদের পক্ষে কখনই মহাবিশ্বের শেষ সীমানায় পৌছানো সম্ভব হবে না। বরং আমরা যে জায়গা থেকে শুরু করেছিলাম সেখানেই আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে। আর ততক্ষণে হয়ত আমাদের আরেকবার চেষ্টা করার উৎসাহ আর থাকবে না।
কেন পৌছাতে পারব না? কারন হলো আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সুত্রের সাথে সামন্জস্য রেখে স্পেসটা অদ্ভুত ভাবে বাঁকানো বা মোচড়ানো। যেটা আমাদের পক্ষে সঠিকভাবে কল্পনা করা সম্ভব না। সহজ করে বলা যায় মহাবিশ্বটা বিশাল এবং নিরন্তর প্রসারিত হচ্ছে এমন কোনো বুদবুদের ভিতরে ভেসে বেড়াচ্ছে না। আমরা যখন বলি যে স্পেস প্রসারিত হচ্ছে আসলে সেটা ভুল। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ী স্টিভেন ওয়াইনবার্গের ভাষায়, ” সৌর জগৎ বা তারকালোক গুলো প্রসারিত হচ্ছে না এবং স্পেস নিজেও প্রসারিত হচ্ছে না বরং তারকালোকগুলো (গ্যালাক্সি) একে অপরের থেকে দুরে সরে যাচ্ছে।” মহাবিশ্বটা একই সাথে বাউন্ডলেস কিন্তু ফাইনাইট। এটা বোধগম্য করা আমদের ইনট্যুইশন বা অন্তর্জ্ঞানের জন্যে একটা বিশাল চ্যালেন্জ। জীববিজ্ঞানী জে.বি.এস হ্যালডেন মজা করে বলেছিলেন, ” মহাবিশ্বটা আসলে আমরা যতখানি ভাবি তার থেকেও বেশি অস্বাভাবিক বা যতখানি আমাদের ইমাজিন করার ক্ষমতা আছে তার থেকেও অনেক বেশি অস্বাভাবিক।”
স্পেসের বক্রতার ব্যাপারটা ব্যখ্যার জন্য একটা উদাহরণ ব্যবহার করা যেতে পারে। ধরুন এমন একজন লোক যে কিনা একটা সমতল পৃথিবীতে বাস করে এবং জীবনেও কখনও কোনো গোল জিনিষ দেখেনি। তাকে যদি আমাদের পৃথিবীতে এনে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং সে আমাদের পৃথিবীর শেষ সীমানায় পৌছানোর জন্য হাটা শুরু করে তবে সে কোনোদিনই তা খুঁজে পাবে না। সে হয়ত এক সময় যেখান থেকে শুরু করেছিলো সেখানেই আবার ফিরে আসবে। এই ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে তাকে কিংকর্তব্যবিমূড় করে ফেলবে। সে কিছুতেই বুঝতে পারবে না এটা কিভাবে সম্ভব। আমরাও হচ্ছি আরও উঁচু মাত্রার স্পেসের মধ্যে সেই সমতল-ভূমির হতবুদ্ধি মানুষের মত।
মহাবিশ্বের যেরকম কোনো স্হান নেই যেখানে আমরা দাড়িয়ে বলতে পারব এইটা হচ্ছে এর শেষ সীমা সেরকম কোনো কেন্দ্রও নাই যেখানে দাড়িয়ে আমরা বলতে পারব এইটাই সেই যায়গা যেখান থাকে সব কিছুর শুরু হয়েছিলো বা এটাই মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু।
আমাদের জন্য মহাবিশ্বটা ততদূর লম্বা যতদূর পর্যন্ত আলো মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত পৌছাতে পেরেছে। এই দৃশ্যমান বিশ্ব, যেটা সম্পর্কে আমরা জানি বা যেটা নিয়ে কথা বলতে পারি, মিলিয়ন, মিলিয়ন, মিলিয়ন, মিলিয়ন (১,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০) মাইল ব্যাপি বিস্তৃত।এর পরে আরও যা আছে সেটার হিসাব হয়ত সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যাবে না।
সূত্র: এ শর্ট হিস্ট্রি অব নিয়ারলি এভরিথিং (বিল ব্রাইসন)।